সাগরসমান নদী আর তার পাড় ধরে বিচিত্র সব আয়োজন, এমন মেঘনা পাড়ের গল্প শুনে আসছিলাম অনেক অনেকদিন ধরে। সুযোগ টা হয়ে উঠছিল না। Imran Hossein Sajib সজিবের বদন্যতায় আর আড়াইহাজার উপজেলার স্বপ্নচারী উদ্যোক্তা Shahinoor Araihazari ভাই এর সোজন্যে হটাত করেই ঘুরে এলাম মেঘনা পাড়ের আড়াইহাজার।
কি নেই সেখানে, শুরুতেই শাহীনুর ভাই এর বাসায় ব্যাগ রেখে পাশের দোকানের মালাই চা, সকালের হাল্কা কুয়াশা মাখা রৌদ্রে বসে এমন মজার স্বাদ গন্ধের চা দিনটাই ভাল করে দেবে।
এরপর ভাই এর নিজের গাছের খেজুরের রস, আমি অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম না কবে লাস্ট খেজুরের রস খেয়েছি। আহ আহা আহ – আমার চরম প্রিয় এই জিনিষ পেয়ে পুরা বোতল খালি করে দিলাম। আধা ঘন্টার পরিচয়ে শাহীনুর ভাই যে এমন ঋণী করে দেবেন এভাবে জানলে আরো অনেক আগেই আসতাম।
এরপর আড়াইজাহার আর মেঘনা এক্সপ্লর করার পালা। এই এলাকার ইতিহাস হাজার বছরের, ৬০০ বছেরের পুরান মসজিদ পাওয়া গিয়েছে, পানাম নগরী খুব কাছেই, আর সেই ইতিহাসের সাথে এখনো দেশি তাঁত শিল্প সগৌরবে বুনে চলেছে গামছা, শাড়ি, জানলাম কাতান শাড়ি বেশ নামকরা এখাঙ্কার কারিগর দের দারুন হাতে বুননে। ১০০ বছরের বেশি পুরানো বটগাছ এ কয়েকটা সেলফিও তুলে নিলাম চলতে চলতে। সাথের জন দুটা গামছা কিনে ফেললেন।
এ আর এমন কি, মুডে দেখতে দেখতে এগিয়ে চললাম উপজেলার রাস্তা ধরে নদীর দিকে, ঘাট এ নেমেই চক্ষু চড়কগাছ, নদীমাতৃক বাংলাদেশের পুলিশের পরিতাক্ত একটা প্রিজন ভ্যাসেল স্টিমার। নদী যে বাংলার যোগাযোগ ব্যাবস্থার কতটা ছিল এটাই প্রমান। সেই নদী এখনো বিশাল , একটা লঞ্ছ ভাড়া করে এগিয়ে চল্ললাম একটা চরের দিকে, ১৫ মিনিটের মধ্যে কাছের চরে পৌছে আবার অবাক হবার পালা!!!
এ আমি কোথায় আসলাম! পুরা দ্বীপের মত আর সাথে স্বচ্ছ কাচের মত পানি। নিচের শামুক, ঘাস, বালি সব পরিষ্কার! সজীব ঝাপিয়ে পরল দেরি না করেই, আমি পারে বসে ফিল নিতে থাকলাম আর সোহানুর ভাই বলে দিলাম নেক্সট টাইম বড় দল নিয়ে আসছি আর এমন জায়গা বার বার আসলেও মন ভরে না। তাবু করে থেকে যাব পরের বার।
ঘন্টাখানেক পরে আবার রওয়ানা লঞ্ছে করে, পথে মাত্র ধরা তাজা মাছ, চিংড়ি কিনে নিলেন শাহীনুর ভাই, সাথে জেলেদের সাথে অল্পসল্প গল্পও হয়ে গেল। মাটির মানুষদের জীবন আমাদের লোভাতুর জীবনের চেয়ে অনেক বেশি পরিস্কার- ঠিক পাশে বয়ে যাওয়া মেঘনার মতই।
ফেরিঘাট-ই আমাদের নৌকা ভ্রমণের শেষ গন্ত্যব্য ছিল, সেখানে যবার আগের, PGCB এর বিশাল ১০০ মিটার টাওয়ার ছবি তোলার জন্য খুব ভাল একটা জায়গা, পাশে ফলিত পুষ্টি ইন্সটিটিউট এর জায়গা। ফেরিঘাটে তাজা এবং বিশাল বিশাল চিংড়ি, দেখে মাথা খারাপ। ঢাকা নিতে পারলে খুব ভাল লাগত।
ঘোরা শেষ, আবার Shahinoor Araihazari ভাঈ এর ডেরায় ফিরে আলুপুড়ি, সিঙ্গাড়া মেরে, আর পরেরবার হাঁসের মাংস খাব এমন পণ করে আসলাম। ভাই এর হাসি দেখতে হলেও আবার যাওয়া লাগবে। অনেক বিদেশিদের উনি যেভাবে আপ্যায়ন করেন তাতে দেশের সুনাম টাও উনার কল্যানে বেড়া যাচ্ছে। আরেকটা ব্যাপার উনার বাসার পিছনে গাছ গাছালি ভরা, সেখানেও আড্ডার ভাল জায়গা, পাশেই গুইসাপ, বক ভালই এন্টারটেইন করবে।
ঢাকার এত কাছে এমন একটা ট্যুর এত অল্প সময়ে হয়ে যাবে ভাবতেও পারি নাই। প্রস্তুতি নিয়ে যাই নি দেখে পানিতে নামা হল না, হাঁসের মাংস খাওয়া হল না, রাতে ক্যাম্পিং করা হল না। এবার প্লান করে যাব। কে কে যাবেন?
যেতেই হবে আবার, একেক মৌসুমে একেকবার, কাজের ফাকে রিলাক্স করতে কাছাকাছি এত অল্প রাস্তার দূরত্বে আর কোথায় এমুন তৃপ্তি পাওয়া যাবে!?
No comments:
Post a Comment